মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। বাজেটের পরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসের যে কোন সময় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে এমন গুঞ্জন হচ্ছে আওয়ামী লীগ মহলে। বিভিন্ন সূত্র গুলো বলছেন, মন্ত্রিসভায় আরও নতুন মুখ আসতে পারে। এজন্য একাধিকজনের নামের লিস্ট তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দু একজন মন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তনের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সপ্তাহব্যাপী নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। এরআগে গত ২১ জুন দু’দিনের ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। আজ শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট পাশ করা হবে। আগামীকাল রোববার (৩০জুন) পাস হবে অর্থবিল। সবকিছু মিলিয়ে গোটা জুন মাস জুড়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা ব্যস্ততা। তাই এই বাজেট অধিবেশনের পরপরই রদবদল হতে পারে টানা চার মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীণ সরকারের মন্ত্রিসভার। ( সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে)
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভায় ৩৭ জন সদস্য শপথ নেন। পরে গত ২ মার্চ দ্বিতীয় দফায় আরও ৭ জন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হন মন্ত্রিসভায়। এতে করে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হতে পারে ৩০ জুন। এরপর যেকোনো দিন মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হতে পারে নতুন মন্ত্রী. প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী অথবা বর্তমান মন্ত্রীদেরও হতে পারে মন্ত্রণালয় রদবদল।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা বড় করার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রাথমিক আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। মন্ত্রিসভার এই রদবদলে এবারও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেছেন, মন্ত্রিসভার রদবদলের বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তবে এটি প্রধানমন্ত্রীর একক এখতিয়ার। তিনি কখন কীভাবে মন্ত্রিসভা রদবদল করবেন তা একান্তই তার সিদ্ধান্ত। কিন্তু মন্ত্রিসভার রদবদলের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে নানা রকম আলাপ আলোচনা এবং উত্তেজনা এখন দৃশ্যমান।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৪৪ জন। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ সদস্য শপথ নেন। এর মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ২৫ জন। প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। পরে গত ২ মার্চ নতুন সাত প্রতিমন্ত্রী শপথ নিলে প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ জনে। সব মিলিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৪৪ জন। যদিও গত মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৯। সে তুলনায় এখন আরও ৫ জন মন্ত্রিসভার সদস্য বাকি রয়েছেন। গত মন্ত্রিসভায় তিন উপমন্ত্রী থাকলেও বর্তমান মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। ফলে কয়েকজন উপমন্ত্রী যুক্ত হতে পারেন। আবার কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী থাকলেও পূর্ণ মন্ত্রী নেই। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আসতে পারে। এ ছাড়া আরও কয়েকজনকে মন্ত্রী করা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে হোম ওয়ার্ক করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে অবজারভেশনে রেখেছেন। তবে অবজারভেশনে কোনো কোনো মন্ত্রি-প্রতিমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ না দিলেও তাদের মন্ত্রণালয় রদবদল করার কথা ভাবছেন। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী যুক্ত হতে পারে। রদবদল হতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে আসতে পারে রদবদল। ভিন্ন কোনো মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীকে রদবদল করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্ত করা হতে পারে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে হতে পারে রদবদল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আসতে পারে রদবদল। একই সঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হতে পারেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেহেতু অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সে কারণে একজন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হতে পারেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসতে পারে রদবদল। শিল্প মন্ত্রণালয়েও আসতে পারে রদবদল। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আসতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রী যুক্ত হতে পারে অথবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসতে পারে রদবদল। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী যুক্ত হতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাই এবারের মন্ত্রীসভায় যারা আসবেন তাদের মধ্যে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, সৎ, শিক্ষিত, দক্ষ তাদেরই মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হবে। এটিই হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমক। তবে তিনি যাকে ভালো মনে করবেন তাকেই মন্ত্রিসভায় রাখবেন। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন, ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, আহমদ কায়কাউস, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আ স ম ফিরোজ, নুরুন্নবী চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, তানভীর শাকিল জয়, মাশরাফি বিন মর্তুজা, এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাজ্জাদুল হাসান। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এ সমস্ত নেতাকর্মীদের আকাঙ্খা। শেখ হাসিনা কী করবেন সেটি সম্পর্কে সকলেই অন্ধকারে রয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী এটি প্রধানমন্ত্রীর একক এখতিয়ার। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দপ্তর বণ্টন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। তবে একাধিক মন্ত্রী ধারণা করছেন, সামনে যে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হবে সেখানে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী আসতে যাচ্ছেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে কে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য মন্ত্রী হবেন-এ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। অন্যদিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন-এটা মোটামুটি নিশ্চিত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে মোহাম্মদ আলী আরাফাত পূর্ণমন্ত্রী হলে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে থাকবেন নাকি অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে যাবেন সেটি নিয়েও বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, বর্তমান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আসতে পারেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। আবার কারও কারও মতে ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তিনি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন স্বল্প সময়ে। এ কারণে তার চটজলদি অন্য মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি একই মন্ত্রণালয়ে থাকবেন। তবে সেখানে ড. সেলিম মাহমুদকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। মোহাম্মদ আলী আরাফাত পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে থাকতে পারেন বলে কেউ কেউ বলছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যতটুকু শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনছেন। তিনি এ বিষয়টি নিয়ে হোম ওয়ার্ক করছেন। এমনকি কাকে কাকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করবেন, এমন একাধিকজনের নামের লিস্ট তৈরি করেছেন তিনি। তবে চলতি মাসে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যখন চাইবেন, তখন হতে পারে। কারণ এটি সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মন্ত্রিসভায় কোনো রদবদল আসছে কি না এমন খবর আমার জানা নেই। আর যদি রদবদল হয়ও সেটি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তিনি যদি মনে করেন, মন্ত্রিসভায় রদবদল করতে পারেন। তিনি চাইলে কেউকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিতে পারেন। আবার যুক্তও করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। একইকথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা। তবে তারা কোনো বক্ত দিতে রাজি হননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
শীঘ্রই রদবদল আসছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের দপ্তর
বড় হচ্ছে মন্ত্রিসভার আকার
- আপলোড সময় : ২৮-০৬-২০২৪ ০৮:৫৯:২১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-০৬-২০২৪ ০২:৩৯:৩১ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ